(১) আগের দিন সন্ধ্যা ৭টা
- হ্যাঁ মা শোন কাল প্রবীর কে নিয়ে সকাল সকাল চলে আসিস।
- কেনো,কাল আবার কি আছে?
- আরে কাল জামাইষষ্ঠী
- তো? আমাদের কোনো কাজ নেই নাকি? এসব বস্তা পচা rituals তোমাদের কাছেই রাখতো।
পাশ থেকে আমাদের আধুনিক জামাই বলল-
"আহ্ মা এতো করে ডাকছে, চল না ঘুরে আসি"
- শুনলে তো ও কি বলল, তবে সকালে যেতে পারব না ডিউটি আছে রাতে যাব।
- হ্যাঁ রে টিভিতে দেখাচ্ছে যে কাল হাফবেলা আফিস
- ওটা সরকারি মা,আমরা কিসে কাজ করি তুমি জানোনা নাকি?
- আচ্ছা ঠিক আছে, তোরা সকাল সকাল চলে আসিস
- ঠিক আছে।
ছোটোবেলা থেকে বর্ণালীর স্বভাবটা এরমই। আদুরে মানুষ তো।
(২) সকাল ৭:০০টা
- ওগো শুনছো,বাজার করে আনো আর শোনো দাঁড়িয়ে থেকে খাসিটা কাটিয়ো কিন্তু যা সব চলছে।
-কখন আসবে ওরা?
-রাতে
-সকালে বলনি কেন?
- আফিস আছে বলল।
-তুমি কিন্ত না খেয়ে থেকো না, সুগারটা বেড়ে যাবে নাহলে।
-একটা দিন সমস্যা হবে না গো। বলছি,টাকা আছে তোমার কাছে? এতো জিনিস আনবে কি করে।
- ও তুমি চিন্তা করো না, কিছু একটা ম্যানেজ করে নেব।
- ধুর্, তোমার ম্যানেজ আমার জানা আছে। এই নাও এই দুলটা ১০০০ টাকা পেয়ে যাবে। যাও, আর দেরি করো না।এরপর আর মাংস পাবেনা।
চোখের জল মুছতে মুছতে বর্ণালীর বাবা বেরিয়ে গেলো।
আজ ২০ বছর হয়ে গেলো বর্ণালীর বাবার চাকরিটা আর নেই,বর্ণালীর মা সেলাই করে আর বর্ণালীর বাবার পাড়ার মোড়ে চপ বিক্রি করে সংসার চালায়।অভাবের মধ্যেও বর্ণালীর পড়াশোনায় টান পড়েনি।TCS এ চাকরি পাওয়ার পরই প্রবীরের সাথে বর্ণালীর দেখা।ছাদনাতলায় যেতে বেশি সময় লাগেনি ওদের।
- না পুরোনো কথা ভেবে লাভ নেই,যাই পিঁয়াজটা কেটে নি।
(২) সকাল ১১:০০
- এই নাও গিন্নি,জিনিসের যা দাম বাপরে
- হ্যাঁ গো সব কুলিয়েছে তো?
- ৫০০টাকা ছিল আমার কাছে,ওটাও লেগেছে। ছাড়তো ওসব, জলদি রান্না করো।
(৩) দুপুর ১:৩০
- চলো, মা বাবার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যেতে হবে,মিষ্টিও কিনতে হবে।বেকার ফালতু খরচা, কেন যে যাবার জন্যে ঝোঁক ধরলে উফ্
- চলতো একটা সস্তার পাঞ্জাবী আর শাড়ি কিনে দেব, ভালো খাবার তো জুটবে।জামাই আদর বলে কথা ১০-১২ রকম পদ তো করবেই।বিয়ের পর এই প্রথম
জামাইষষ্ঠী উফফ্ আমি খুব excited.
- ওই আশায় থাকো তুমি,বিয়ের মেনুটা মনে আছে? ডাল-ভাত-তরকারী
- হুম
(৪) দুপুর ৩টে
-তুমি খাবে না গো? এরম করে না খেয়ে থাকাটা কি ঠিক?
- তুমি খেয়ে নাও তো।
- এই নাও বেশি কিছু দিতে পারবো না, রাতে ওদের সাথে যদি খেতে বসতে হয়।
- আর তুমি?
- আরে আজ তো আমার নিরামিষ। খেয়ে নাও।
(৫) রাত ৮টা
- সকাল থেকে তো কিছু মুখে তোলনি,এবার তো কিছু খাও
-জামাইকে কুলোর হাওয়া না দেওয়া অব্দি আমি অন্ন গ্রহন করবো না, আমার ছেলের ক্ষতি কি করে চাইব বলো? ওদের একটু ফোন করো না গো।
- ঠিক আছে করছি।রিং হচ্ছে। হ্যালো, কতদুর এলি?
- বেরোয় নি, এত জলদি গিয়ে কি হবে? চিন্তা করতে হবেনা আমি আর প্রবীর ঠিক পৌঁছে যাব।
(৬) রাত সাড়ে ৯টা
- মা ও মা,খোলো গো।
-এই যে মা আসছি।
- কতবার বলেছি,একটা Calling Bell কেনো, কিন্তু না আমার তো কোনো কথাই তোমরা শুনবে না।
- আচ্ছা রাগিস না, আয়।বাবা তুমিও এসো।
- এই নিন আপনাদের জন্য সামান্য কিছু উপহার এনেছি।
- আরে বাবা এসবের কি দরকার ছিল।
- মা খেতে দাও খিদে পেয়েছে।
- দাঁড়া, জামাইকে একটু কুলোর বাতাস দি আর ফোঁটাটা দি।তারপর দিচ্ছি।
- আবার তোমার নিয়ম।উফফ্ জলদি করো তো।
(৭) রাত সাড়ে দশ
- বসে পড়।খাবার বেড়ে দিচ্ছি।তুমিও বসে পড়ো।
- হুম
- তুমি মাটিতে বসতে পারবে তো প্রবীর? তোমার তো চেয়ার টেবিল ছাড়া বসার অভ্যাস নেই।
- অসুবিধা নেই।
বর্ণালীর মা খাবার বেড়ে দিল।
- এবাবা আর কিছু করোনি? একটা সেল্ফিও তুলতে পারবো না ধুর্। Statusটাও Maintain করতে দাও না।
-একা হাথে করেছি তো, তাই ৬টার বেশি করতে পারলাম না।
- দাঁড়া মাংসটা দি।
- না না ওসব ভাগাড়ের মাংস খাব না।
- না রে তোর বাবা তো দাঁড়িয়ে থেকে মাংসটা কাটিয়ে এনেছে।
- না বাবা আমি খাব না, তুমিও খেও না। ইলিশ মাছ করতে পারতে তো।
-তুই মাংস খেতে ভালোবাসিস তো তাই...
বর্ণালী আর প্রবীর চলে গেলো।
- কেঁদো না গো, সকাল থেকে কিছু খাওনি খেয়ে নাও।এই নাও মিষ্টি।
- আমি পারলাম না গো ওদের খুশি করতে।
- কি করবে বলো, আমাদের কপাল |
(৮) পরদিন সকাল ৮টা
- মা, দুদিন খাই নি, দুমুঠো ভাত দেবে।
বর্ণালীর মা ভাতের সাথে মাংসটাও দিল
- একি মা আমি তো শুধু ভাত চাইলাম, মাংস দিচ্ছেন কেন?
- মা বললি আর সন্তানকে না খেতে দিয়ে আমি কি করে খাই বল।কাল তো শুধু জামাইষষ্ঠী যায় নি, কাল সন্তানষষ্ঠীও ছিল।তোর মঙ্গল হোক।
( সমাপ্ত)
জামাইষষ্ঠী পালন করছেন ভালো কথা,কিন্তু কাউকে সমস্যায় ফেলে নয়।
ভালো লাগলে Page এ লাইক দিয়ে যাবেন।
Follow Us on Facebook
Comments
Post a Comment